আন্তর্জাতীক

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা

মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বিরোধ পুরনো। কয়েক দশক ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুটি ‘ছায়াযুদ্ধে’ লিপ্ত। ইরানের শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানী মহসিন ফাখরিজাদেহ হত্যাকাণ্ডের পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কফিনে শেষ পেরেক লেগে যায়। ইরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানিদের ক্ষোভ স্তিমিত না হতে নতুন ইস্যুতে সম্প্রতি আরো ঘনীভূত হয়েছে সংকট।
আগামী সপ্তাহে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ দেশটির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি এক জরুরি সফরে তিনি তুরস্কে গেছেন।
আঙ্কারায় ইসরায়েলি পর্যটকদের ওপর ইরানি এজেন্টরা হামলা চালাতে পারে— এমন আশঙ্কার মধ্যেই তার এই সফর।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে ছায়াযুদ্ধ চলছে, এ অভিযোগের মধ্য দিয়ে সেটি যেন আরও বেশি প্রকাশ্য হয়ে পড়ছে।

বছরের পর বছর ধরে ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের গোপন তৎপরতা চালিয়ে আসছে।
ইসরায়েল ইরানকে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করে।

ইরানও ইসরায়েলকে বিবেচনা করে তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে। কারণ এ দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহচর।

এ ছাড়া ইরানের আঞ্চলিক শক্তি হয়ে ওঠার বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে তারা একটি বড় বাধা হিসেবেই দেখে।

ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয় ২০২০ সালে যখন ইরানের নেতারা তাদের শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানী মহসিন ফাখরিজাদেহর হত্যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করতে শুরু করেন।

রাজধানী তেহরানের বাইরে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ইরানের অভিযোগ তাকে দূর-নিয়ন্ত্রিত মেশিনগান দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

ইসরায়েল এই অভিযোগ স্বীকার করেনি এবং প্রত্যাখ্যানও করেনি।

২০০৭ সালের পর ইরানের পাঁচ শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানী খুন হযেছেন মহসিন ফাখরিজাদেহ তাদের মধ্যে পঞ্চ

ফাখরিজাদেহ ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান বলেন, এই বিজ্ঞানী ‘বহু বছর ধরেই’ ইসরায়েলের টার্গেট ছিলেন। তিনি আরও বলেন, তার বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের কারণে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা উদ্বিগ্ন ছিল।

পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও মনে করে ইরান যে গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার জন্য কাজ করছিল তার প্রধান ছিলেন মহসিন ফাখরিজাদেহ।

এর কয়েক মাস পর জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেন। যেটি তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প বাতিল করে দিয়েছিলেন।

কিন্তু এর মধ্যেও ইরান ও ইসরায়েল পরস্পরের বিরুদ্ধে গোপন তৎপরতা অব্যাহত রাখে।

ইসরায়েল ঘোষণা করে যে, তারা ইরানিদের চালানো কথিত একটি হত্যা প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে।
ইসরায়েরের অভিযোগ, তেহরান তেলআবিবের ভেতরে ড্রোন দিয়ে হামলার চেষ্টা করেছিল।

দুটো দেশই পরস্পরের মালবাহী জাহাজে হামলা চালায়। গত সপ্তাহে তেহরানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, ইরানের একটি ভূগর্ভস্থ পরমাণু স্থাপনায় নাশকতামূলক হামলার জন্য ইসরায়েলই দায়ী।

সম্প্রতি ইরান জানায়, ইসরায়েলি গুপ্তচর বাহিনী মোসাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তারা তিন ব্যক্তির বিচার শুরু করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যায় জড়িত থাকারও অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুপক্ষের মুখোমুখি অবস্থান দেখে অনেকে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ধারনা করছেন যে, এবার ছায়াযুদ্ধের পরিবর্তে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারে ইরান ও ইসরায়েল।

সূত্র: বিবিসি

Related Articles

Back to top button