আন্তর্জাতীক

উবারের বিরুদ্ধে ৫৫০ নারীর যৌন নিপীড়নের মামলা

উবারের বিরুদ্ধে ৫৫০ নারীর যৌন নিপীড়নের মামলা

জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম উবারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ৫৫০ নারী মামলা করেছেন।

অপহরণ, যৌন হয়রানি, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, মিথ্যা বলে ফাঁদে ফেলা, পিছু নেয়া, হয়রানি করা বা আক্রমণ করা হয়েছে এমন গুরুতর সব অভিযোগ আনা হয়েছে উবার চালকদের বিরুদ্ধে।

বুধবার (১৩ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো কাউন্টি সুপারিয়র আদালতে এসব মামলা করা হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

মামলা প্রসঙ্গে উবারের এক মুখপাত্র বলেন, ‘যৌন নিপীড়ন একটি ভয়ংকর অপরাধ এবং প্রতিটি অভিযোগকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখি।’

তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। যার কারণে উবার নতুন নিরাপত্তা ফিচার নির্মাণ করেছে, ভুক্তভোগীদের কথা মাথায় রেখে নীতিমালা বানিয়েছে এবং গুরুতর ঘটনাগুলোর বেলায় আরও স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে। যদিও আমরা বিচারাধীন মামলা নিয়ে মন্তব্য করতে পারছি না, আমরা নিরাপত্তার বিষয়টিকে আমাদের কাজের কেন্দ্রেই রাখবো।’

বিবিসি জানিয়েছে, মামলার নথিপত্র অনুযায়ী যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের। এমন আরও দেড়শ ঘটনা এখনও তদন্ত করে দেখার কথা জানিয়েছে ভুক্তভোগী নারীদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান

মামলায় অভিযোগ, ২০১৪ সালেও উবার জানতো যে কোম্পানিতে নিবন্ধিত চালকরা নারী যাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালাচ্ছে। কিন্তু কোম্পানিটি সে সময় যাত্রীর নিরাপত্তার চেয়ে ব্যবসা প্রসারণেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগীদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘স্লেটার স্লেটার শুলম্যান’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অ্যাডাম স্লেটার মন্তব্য করেছেন, উবারের পুরো ব্যবসায়িক ধারণাই মানুষকে নিরাপদে বাড়ির ফেরার সেবা দেওয়ার ভাবনা কেন্দ্রীক। “কিন্তু যাত্রীর নিরাপত্তায় তারা কখনোই গুরুত্ব দেয়নি। যাত্রীর নিরাপত্তায় আপোস করে ব্যবসা বাড়ানোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের কাছে।”

জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের দ্বিতীয় নিরাপত্তা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে উবার। কোম্পানির নিজস্ব প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে, কেবল ২০২০ সালেই যৌন নিপীড়নের ঘটনা ছিল ৯৯৮টি। এর মধ্যে ১৪১টি ছিল ধর্ষণ।

২০১৯ – ২০ সালে যৌন হয়রানির সবচেয়ে গুরুতর পাঁচটি শ্রেণিতে তিন হাজার ৮২৪টি অভিযোগ পেয়েছে উবার। কোম্পানির প্রথম নিরাপত্তা প্রতিবেদনে ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ছিল পাঁচ হাজার ৯৮১টি।

বিবিসি বলেছে, সাড়ে পাঁচশ নারী যে অভিযোগগুলো এনেছেন তার বেশিরভাগই গুরুতর অভিযোগ। ভুক্তভোগীর সংখ্যাটিও চমকে যাওয়ার মতোই।

সময়টা একেবারেই ভালো যাচ্ছে না রাইড হেইলিং প্ল্যাটফর্মটির। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কোম্পানির আন্তর্জাতিক ব্যবসায় কৌশল নিয়ে দ্য গার্ডিয়ান এবং ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজি)’র লেখা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কোম্পানির নানা বেআইনি কর্মকাণ্ড।

ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ নথিপত্র বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুষ আর যোগসাজশের মতো অনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে আর স্থানীয় ট্যাক্সি বাজার ধসিয়ে শীর্ষে উঠেছে কোম্পানিটি। তথ্য ফাঁসকারী হিসেবে জনসমক্ষে এসেছেন কোম্পানির এক সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

সোমবারেই কোম্পানির সাবেক চিফ অফ পলিসি ম্যার্ক ম্যাকগান ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, উবার সবসময়ই নিজের ব্যবসাকেই অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

ম্যাকগানের ফাঁস করা তথ্য উপাত্ত থেকে প্রমাণ মিলেছে, তদন্তকারীরা যেন কোম্পানির কম্পিউটার সিসে্েটম প্রবেশাধিকার না পান, সেটি নিশ্চিত করতে বিশেষ ‘কিল সুইচ’ বানিয়ে রেখেছিল উবার।

যৌন নিপড়নের মামলাটিতেও একই ধরনের অভিযোগের কথা জানিয়েছে বিবিসি– কোম্পানির চালকরা যে নারী যাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করছেন সে বিষয়টি চেপে গিয়েছে উবার।

অর্থাৎ, নারী যাত্রীদের জন্য রাইডের ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত থাকলেও বারাবর নিজেদের সেবাকে নিরাপদ বলে চালিয়ে দিয়েছে উবার।

কোম্পানিটি চালকদের অতীত কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে যাচাই করে দেখেনি– এমন অভিযোগও আনা হয়েছে মামলায়।

Related Articles

Back to top button