প্রথম চুমু কে দিয়েছিল? দেখে নিন স্মরণীয় চুম্বনগুলো
প্রথম চুমু কে দিয়েছিল? দেখে নিন স্মরণীয় চুম্বনগুলো

হৃদয়ে যে ভালোবাসা বা প্রেম আছে, তা প্রকাশ করতে আমরা নানা রকম মাধ্যমের সাহায্য নিয়ে থাকি। তারই একটা মাধ্যম চুমু, যা ইউরোপ ও আমেরিকার প্রায় সব দেশেই হয়ে থাকে। এশিয়াতে চুমুর সাহায্যে ভালোবাসা প্রকাশ সাধারণত ঘরের ভেতর! প্রকাশ্যস্থানে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে।
তবে ঘরে কিংবা বাইরে হোক; চুমু রোমান্টিকতার অন্যতম বিষয়। অন্যকে চুমু খাওয়া বিশেষ করে প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই বেশি দেখা যায় কিংবা স্বামী-স্ত্রীর বেলাতেই। ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রের চুমুর স্থান অনেক উপরে। সেটা হোক প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু-বান্ধব কিংবা ভালোবাসার যে কোন বন্ধনে চুমুর গুরুত্ব ব্যাপক। আজ বিশ্ব চুমু দিবস।
আচ্ছা, কখনো কি মনে হয়েছে চুম্বন কীভাবে প্রকাশ্যে আসে? কীভাবেই বা চুম্বনের ব্যাপারটি ভালোবাসা প্রকাশে ব্যবহৃত হলো? চলুন পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণীয় চুম্বনগুলোর কথা জানা যাক-
বিশ্বের প্রথম রেকর্ড করা চুম্বন
বিশ্বের প্রথম চুম্বনটি ছিল ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বে। ভন ব্রায়ান্ট, টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নৃতত্ত্ব অধ্যাপক ড. এর গবেষণা অনুযায়ী বৈদিক সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থে চুম্বনের উল্লেখ রয়েছে। বেদ হিসাবে পরিচিত এই ধর্মগ্রন্থগুলো ছিল হিন্দু ধর্মের ভিত্তি।
এরপর, প্রাচীন ভারতীয় এবং হিন্দু সাহিত্যে চুম্বন অব্যাহত ছিল। মহাভারতে একটি সংস্কৃত মহাকাব্য একটি লাইনের লাইনের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রাচীন এসব সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থে কামসূত্র ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চুম্বন পদ্ধতি নিয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে।
জুডাসের চুম্বন
চুম্বন কেবল রোমান্টিকতাই নয়। এটি বন্ধুত্ব বা বিশ্বাসঘাতকতার লক্ষণও হতে পারে। ইন ম্যাথু এবং মার্ক এর প্রথম শতাব্দীর লেখায় পাওয়া গেছে, জুডাসের বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপারে। জুডাস যীশুকে হত্যার আগে চুম্বন করেছিল। এরপর থেকেই চুম্বন হয়ে ওঠে বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিক। মাফিয়া সাহিত্যে এবং চলচ্চিত্রে এর নামকরণ করা হয় “মৃত্যুর চুম্বন”। এর সবচেয়ে উপযুক্ত উদাহরণ হলো দ্য গডফাদার দ্বিতীয় খণ্ড। যেখানে দেখানো হয়েছিল আল পাকিনোর চরিত্রটি তার ভাই ফ্রেডোকে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য হত্যার আগে মৃত্যুর চুম্বন দেয়।
ভি-জে ডে কিস
১৯৪৫ সালের ১৪ আগস্ট। সকালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জাপানে ফিরেছিলেন একজন নেভির নাবিক। জাহাজ থেকেই তিনি তার বান্ধবীকে দেখতে পান। এরপর নেমেই দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে চুমু খান। তবে যখন চুমু শেষ করে নিজেকে ছাড়িয়ে নেন তখন দেখতে পান এ তার বান্ধবী নয়। একজন নার্স। ততক্ষণে এ দৃশ্য ফটোগ্রাফার আলফ্রেড আইজেনস্টেয়েড এবং ভিক্টর জর্গেনসেন প্রত্যেকে ক্যামেরাবন্দী করে ফেলেছেন। আইজেনস্টেডের ছবিটি মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম আইক্লিক ডাব্লুডাব্লিউআইয়ের চিত্র হয়ে উঠেছিল। পরবর্তিতে এ ছবিটি নিয়ে নানা বিতর্ক ওঠে। অনেকে দাবি করেন এরা দম্পতি ছিলেন।
অনেক দিন পর প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, এ উত্তেজনায় নাবিক ভুল করে নিজের বান্ধবীকে পেছনে ফেলে একজন নার্সকে জড়িয়ে ধরেন। দৌড়ে এসে আক্রমণাত্মকভাবে তাকে চুম্বন করে। সাদা পোশাক পরা নার্স ছিলেন জিমার টিকার। যিনি ছিলেন একজন ডেন্টাল সহকারী। জিমার এসেছিলেন যুদ্ধফেরত সৈন্যদের চিকিৎসার জন্য।
২০০৫ সালে জিমার নিজেই লাইব্রেরি অফ কংগ্রেসকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন , “চুমু খাওয়া আমার পছন্দ ছিল না … লোকটি সবেমাত্র এসে চুমু খেয়েছে বা ধরেছে!”
চলচ্চিত্রে প্রথম চুম্বন
পর্দায় প্রকাশিত প্রথম চুম্বনের দৃশ্য ধারণ করা হয় ১৮৯৬ সালে। মে আরউইন এবং জন সি রাইস ছিলেন সে দৃশ্যের অভিনয় শিল্পী। প্রথমে নিউ ইয়র্ক সিটিতে একটি মঞ্চ নাটকে এই দুই অভিনয়শিল্পী চুম্বনের দৃশ্য দেখান। পরে নিউ জার্সির টমাস এডিসনের স্টুডিওতে তাদের চুম্বনের দৃশ্যটি চলচ্চিত্রে প্রকাশের জন্য পুনরায় ধারণ করা হয়।
চলচ্চিত্রে প্রথম কৃষ্ণ চুম্বন
১৮৯৮ সালে কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা সেন্ট সটল এবং জের্তি ব্রাউন অভিনীত একটি আমেরিকান চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এটি ছিল একটি শর্ট ফিল্ম। সামথিং গুড-নেগ্রো কিস নামের এই শর্ট ফিল্মে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গদের চুম্বন দেখানো হয়। চলচ্চিত্রের ইতিহাসবিদরা সেই ফুটেজটি ২০১৭ সালে নতুন করে আবিষ্কার করেছিলেন। যা শিকাগোর উইলিয়াম সেলিগ নামে একজন সাদা ব্যক্তি চিত্রায়িত করেছিলেন।
ফুটেজটিতে দেখা যায় “সেখানে একটি নাচের পারফরম্যান্স করছেন তারা। এরপরই খুব স্বাভাবিকভাবে তারা একে অপরকে চুম্বন করে। চুম্বনে এক অনিচ্ছাকৃত আনন্দের অনুভূতি রয়েছে।” শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেমা ও মিডিয়া স্টাডিজের প্রফেসর অ্যালিসন নাদিয়া ফিল্ড এই ফুটেজ আবিষ্কারে সহায়তা করেন।
প্রথম সাদা-কালো চুম্বন
১৯৬৮ সালে “প্লেটোর স্টেপচিল্ডেন” শিরোনামে মার্কিন টেলিভিশনে একটি নাটক প্রচারিত হতো। সেখানে উহুরার চরিত্রে নিকেল নিকোলস এবং ক্যাপ্টেন জেমসের ভূমিকায় উইলিয়াম শ্যাটনার অভিনয় করেন। ২২ নভেম্বর প্রচারিত একটি পর্বে তাদের চুম্বনের একটি দৃশ্য দেখানো হয়। এটিই ছিল প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এবং শ্বেতাঙ্গের ধারণ করা চুম্বনের দৃশ্য।
নিকোলসের ‘বিউন্ড উহুর স্টার ট্রেক অ্যান্ড অ্যাড মেমোরিজ’ বইটিতে তিনি লিখেছিলেন, এনবিসি চিন্তিত ছিল যে সাদা আমেরিকানরা এই দৃশ্যে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। তাই তারা অভিনেতাদের দুটি দৃশ্যের চিত্রায়ন করতে বলেছিলেন। যার একটিতে চুম্বন এবং অন্যটি চুম্বন ছাড়া থাকবে। এনবিসির চুম্বনের দৃশ্যটি প্রচারিত হয়। তবে এটি নিশ্চিত করার জন্য নিকোলস এবং শ্যাটনার উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমস্ত চুম্বনহীন অংশকে সরিয়ে ফেলেছিল।
সমাজতান্ত্রিক ভ্রাতৃ চুম্বন
কমিউনিস্ট দেশের নেতারা প্রায়ই একে অপরকে সম্ভাষণ করতে চুমু খেয়ে থাকেন। জানেন কি? একে বলা হয় “সমাজতান্ত্রিক ভ্রাতৃত্বমূলক চুম্বন।” এটি গালে বা মুখে যে কোনো জায়গায়ই দেয়া যেতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়নের লিওনিড ব্রেজনভের এবং পূর্ব জার্মানির এরিক হোনেক্কার মুখে চুমু খাচ্ছেন। প্রথম এ দৃশ্যটি ১৯৭৯ সালে ক্যামেরাবন্দী করেন বিখ্যাত ফরাসী ফটোগ্রাফার রাগিস বোসু।
চুম্বনটি ঘটে তখন, যখন ব্রেজনেভ জার্মান ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকের (অর্থাৎ পূর্ব জার্মানি) ত্রয়োদশ বার্ষিকী উদযাপন করতে পূর্ব বার্লিন সফর করেছিলেন। এ ছবির ক্যাপশনে তিনি দিয়েছিলেন “মাই গড, আমাকে এই মারাত্মক প্রেম থেকে বাঁচতে সাহায্য করুন।” সূত্র: হিস্টোরিডটকম