বিএনপির রূপরেখাকে রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা
বিএনপির রূপরেখাকে রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা

চলতি বছরের ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় শেষ হবে। সেই সমাবেশে ‘রাষ্ট্র পরিবর্তনের’ রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করবে বিএনপি। তবে দুঃখের বিষয় হলো ২০০১ সালে নির্বাচনী ইশতেহারের ২০ ভাগও দলটি পূরণ করতে পারেনি।
তাই তাদের রাষ্ট্র পরিবর্তনের রূপরেখা উপস্থাপনের বিষয়টিকে রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি ছাড়া আর কিছুই মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ২০০১ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ২০ ভাগই পূরণ করতে পারেনি। তারা কীভাবে রাষ্ট্র সংস্কার করবে? তারা অতীতেও এমন কথা বলেছে, আগামীতেও বলবে। বিএনপির রাজনীতিই হলো- ‘খাই খাই রাজনীতি’। দুর্নীতিতে জর্জরিত দলটি ঠিক কতটুকু কথা ও কাজের বাস্তবায়ন করবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
২০০১ এর অক্টোবরের নির্বাচনের ভোটগ্রহণের প্রায় তিন সপ্তাহ আগে ঢাকায় দলের পক্ষে ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ৩০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বাস্তবায়ন করেছিল ২০ শতাংশেরও কম।
বিএনপি বলেছিল, সংসদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০০ করবে। বাড়াবে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যাও। তবে বস্তুত কোনো উদ্যোগও গ্রহণ করেনি খালেদা সরকার। প্রবাসী, মুক্তিযুদ্ধ ও তৈরি পোশাক শিল্প মন্ত্রণালয় গঠন করবে বলেছিল, কিন্তু হাওয়া ভবনের লুটপাট আর মি. টেন পার্সেন্ট তারেক রহমানকে কমিশন দিতে দিতে পুরনো মন্ত্রণালয়গুলোই ধ্বংস হয়েছে।
খালেদা জিয়া ইশতেহারে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও এমপিদের সম্পদের হিসাব নেয়া হবে। হিসাব দেয়নি কেউই। অথচ শূন্য থেকে হাজার কোটির টাকার মালিক বনে যান দলের এমপি-মন্ত্রীরা। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ করেনি। স্থায়ী পে-কমিশনের ঘোষণা দিয়েছিল, হয়নি। গঙ্গার পানি চুক্তি করার কথা বলেছিল, পারেনি। বলেছিল, ইন্টারনেট ভিলেজ বানাবে। লুটপাট হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ইন্টারনেট আসেনি। সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছিল। বিদ্যুতের বদলে মিলেছে খাম্বা, আলো আর আসেনি।
সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের সমান অধিকার নিষ্ঠার সঙ্গে রক্ষার নীতিতে অবিচল থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা কঠোরভাবে দমনের ব্যবস্থা করেনি। উল্টো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সব চেষ্টাই করেছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার। সে সময়ে জঙ্গিবাদে দেশের সাধারণ মানুষ পর্যদুস্ত হয়ে পড়েছিল।
কথা দিয়েও অনগ্রসর পাহাড়ি ও আদিবাসী জনগণের সাংস্কৃতি রক্ষা, চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সব সুবিধা সম্প্রসারণ এবং পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন কার্যক্রমে মোটেও জোর দেওয়া হয়নি। কৃষিপণ্যের উৎপাদনে ভাবলেশহীন ছিল খালেদা। তবে হ্যাঁ একটা বিষয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে করেছে বিএনপি সরকার। সেটা হচ্ছে দুর্নীতি। টানা ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুর্নীতিতে।
এ দলটির প্রধান থেকে শুরু করে ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় তাদের দেওয়া ইশতেহারের ২০ শতাংশও বাস্তবায়ন হয়নি।
দুর্নীতির দায়েই দণ্ডিত হয়ে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বর্তমানে দণ্ডপ্রাপ্ত। সরকারের মানবিক বিবেচনায় বাসায় থাকার সুযোগ পেয়েছেন। আর সাজার বেড়ি পায়ে পরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারেক রহমান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সেই বিএনপিই এখন রাষ্ট্র পরিবর্তনের রূপরেখা দিতে চাইছে। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার, বিএনপির রূপরেখা কোনো কাজে আসবে না কারণ, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেশের মানুষ আস্থাশীল। তাই বিএনপির রূপরেখা রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।